পরিবেশের ভারসাম্য এবং আমাদের জীবন (চতুর্দশ অধ্যায়)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান | NCTB BOOK
841

তোমরা জান, আমাদের চারপাশের সবকিছু নিয়েই এই পরিবেশ। একটি স্থানের সকল জড় ও জীব নিয়েই সেখানকার পরিবেশ গঠিত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ তুমি দেখতে পাবে। পরিবেশের এই বিভিন্নতার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের জীবও বিভিন্ন ধরনের হয়। তোমরা জান জীবের মধ্যে রয়েছে সল উদ্ভিদ ও প্রাণী। একটি পরিবেশে কোন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী বসবাস করবে তা নির্ভর করে সেখানকার পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের উপরে। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান মানুষসহ অন্যান্য সকল জীবকে প্রভাবিত করে।

এই অধ্যায় শেষে আমরা

  • প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পরিবেশের উপাদানসমূহ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশের উপাদানসমূহের আন্তঃসম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পরিবেশের উপাদানসমূহের সংরক্ষণের কৌশল ব্যাখ্যা করতে পারব।

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

উদ্দীপকটি পড় প্রশ্নের উত্তর দাও

উদয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফী চ্যানেলে একটি বিলুপ্ত প্রাণীর ছবি দেখল যা লক্ষ লক্ষ বছর পূর্বে ছিল।

হাজার হাজার বছর
লক্ষ-লক্ষ বছর
কোটি-কোটি বছর
বিলিয়ন-বিলিয়ন বছর

প্রাকৃতিক পরিবেশ (পাঠ - ১)

372

আমাদের চারপাশের পরিবেশ লক্ষ কর। দেখবে পরিবেশের কিছু জিনিস মানুষ তৈরি করেছে। আবার কিছু আছে যা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট। অর্থাৎ যেগুলো মানুষ তৈরি করতে পারে না। তাহলে কোনটিকে আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ বলব?

প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বস্তুগুলো নিয়ে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেটাই প্রাকৃতিক পরিবেশ। এর মধ্যে জড় বস্তু ও জীব দুটোই রয়েছে যেগুলো মানুষ তৈরি করতে পারে না।

মানুষ তার প্রয়োজনে ঘর-বাড়ি, বাস-ট্রাক, নৌকা, রাস্তাঘাট, সেতু, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ইত্যাদি তৈরি করে। এগুলো মানুষের তৈরি পরিবেশ নামে পরিচিত।
তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, আমাদের চারপাশের পরিবেশে আরও কিছু বস্তু আছে যা মানুষ তৈরি করতে পারে না। যেমন- চাঁদ, তারা, মাটি, নদী, সমুদ্র, পাহাড়, বনজঙ্গল, মানুষ, পশু-পাখি ইত্যাদি। এগুলো সবই প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান।

কাজ: তোমার বাড়ি থেকে রওয়ানা হয়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছা পর্যন্ত আশেপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ কর। মানুষের তৈরি এবং প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বস্তুগুলো শনাক্ত করে এগুলোর নাম তোমার নোট খাতায় লিখে রাখ। শ্রেণিতে আলোচনা কর।

পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে। যেমন: বনজঙ্গলের পরিবেশ, পাহাড়-পর্বতের পরিবেশ, নদীর পরিবেশ ইত্যাদি। তোমার দেখা বা জানা এ ধরনের আর কী কী প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে?

Content added By

পরিবেশের উপাদান (পাঠ - ২)

624

পরিবেশকে প্রধানত দুটো ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো পরিবেশের সকল সজীব উপাদান, যা জীব উপাদান নামে পরিচিত। এই জীব উপাদানকে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সকল উপাদান নিয়ে আর একটি পরিবেশ গঠিত। যাকে বলা হয় জড় পরিবেশ বা অজীব পরিবেশ।

কাজ: শিক্ষকের সহায়তায় দল গঠন কর। স্কুলের মাঠে যাও। পরিবেশ পর্যবেক্ষণ কর। জড় পরিবেশ এবং জীব পরিবেশের উপাদানগুলো শনাক্ত করে নোট খাতায় লিখ। দলে আলোচনা কর। পোস্টার পেপারে ছক তৈরি কর। জড় ও জীব উপাদানগুলোর নাম ছকে লিখ। শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।

জীব পরিবেশের উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী। পরিবেশের প্রাণহীন সব উপাদান নিয়ে জড় পরিবেশ গঠিত। এগুলো অজীব বা জড় উপাদান নামে পরিচিত। জড় পরিবেশের মূল উপাদান হচ্ছে মাটি, পানি এবং বায়ু। কারণ এ উপাদানগুলো ছাড়া কোন জীবই বেঁচে থাকতে পারে না।

Content added By

পরিবেশের জড় ও জীব উপাদান (পাঠ ৩-৪)

1.5k

কাজ: নিচে দেওয়া ছকটি খাতায় তুলে নাও। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান কীভাবে তোমার জানা উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনকে প্রভাবিত করে তা লিখে ছকটি পূরণ কর। শ্রেণিতে আলোচনায় অংশগ্রহণ কর।

ছক

পরিবেশের উপাদান

উদ্ভিদের কী কাজে লাগে

প্রাণীর কী কাজে লাগে

মাটি

পানি

বায়ু

মাটি, পানি, বায়ু, আলো, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, জলবায়ু ইত্যাদি বিভিন্ন অজীব উপাদান বিভিন্নভাবে পরিবেশের প্রতিটি জীবের স্বভাব এবং বিস্তৃতিকে প্রভাবিত করে। এসব উপাদানের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে, পরিবেশের একটি নির্দিষ্ট স্থানে কোন ধরনের জীব উপাদান থাকবে। সুতরাং বুঝতে পারছ, অজীব বা জড় উপাদান জীবের বেঁচে থাকার জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ।

কাজ: পাঠ ১-এ তোমরা তোমাদের স্কুলের আশেপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে জীব পরিবেশের যে সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী শনাক্ত করেছ সেগুলো কোন ধরনের পরিবেশে জন্মে বা বাস করে তা পর্যবেক্ষণ কর। উদ্ভিদ ও প্রাণীর বসবাসের পরিবেশের পার্থক্য লক্ষ কর। নিচের ছকটি পোস্টার কাগজে বা পুরনো ক্যালেন্ডারের পেছনে তুলে ছকটি পূরণ কর এবং শ্রেণিতে প্রদর্শন কর।

ছক

জীবের নাম

কোন ধরনের পরিবেশে জন্মে / আবাসস্থল

উদ্ভিদ

প্রাণী

তোমার আশেপাশের পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী পর্যবেক্ষণ করে তাদের আবাসস্থল সম্পর্কে তোমার ধারণা কী?


পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণী
পরিবেশে জীব উপাদানের মধ্যে রয়েছে সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী। এ সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী কীভাবে বিভিন্ন পরিবেশে বেঁচে থাকে তা কী কখনও ভেবেছ?

কাজ: শিক্ষকের সহায়তার দল গঠন কর। পোস্টার কাগজ নাও। দুটো ভিন্ন পরিবেশের (যেমন বনজঙ্গল এবং মরুভূমির পরিবেশ) নাম পোস্টার কাগজে লিখ। তোমরা যে দু'টো পরিবেশের নাম পোস্টার কাগজে উল্লেখ করেছ, সে পরিবেশে কোন কোন উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে, সেগুলো আর একটি পোস্টার কাগজে নামসহ চিত্র এঁকে কাঁচি দিয়ে কাট। এসব উদ্ভিদ ও প্রাণী তোমার উল্লিখিত দু'টি পরিবেশের মধ্যে যে পরিবেশে বাস করে সেখানে আঠা দিয়ে লাগাও। শ্রেণিতে বুলেটিন বোর্ড অথবা দেয়ালে প্রদর্শন কর। সব দল ঘুরে ঘুরে দেখবে ও শ্রেণিতে আলোচনা করবে।

পরিবেশের সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য কিছু মৌলিক উপাদান প্রয়োজন। বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদের প্রয়োজন পানি, বায়ু, খাদ্য ও সূর্যের আলো। শত্রু থেকে এদের আত্মরক্ষাও প্রয়োজন।
প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন পানি, বায়ু, খাদ্য, তাপমাত্রা এবং বাসস্থান। প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য শত্রু থেকে নিজেদের রক্ষা করে।
তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, তোমাদের দেখা সকল পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী এক রকমের নয়। পৃথিবীর সকল অঞ্চলে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বসবাস। সমতল ভূমি থেকে আরম্ভ করে পাহাড়, মাটির নিচে, বনজঙ্গল, খাল-বিল, পুকুর, নদী, সমুদ্র, মরুভূমি ইত্যাদি সকল স্থানেই বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মে ও প্রাণী বাস করে। জলবায়ু, মাটি, পানি, আলো ও অন্যান্য উপাদানের ভিন্নতার কারণে এ সকল অঞ্চলের উদ্ভিদ ও প্রাণী বৈচিত্র্যও ভিন্ন।

Content added By

পরিবেশের ভারসাম্য (পাঠ ৫-৬)

838

পরিবেশের ভারসাম্য

পরিবেশে কোনো জীবই এককভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য জীব বিভিন্নভাবে তার চারপাশের পরিবেশের উপর নির্ভর করে। বেঁচে থাকার জন্য আমরাও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভর করি। ভেবে দেখতো যে সকল উৎস থেকে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পাই তা যদি কোনো কারণে নষ্ট হয় তবে আমাদের জীবনে কী ঘটবে?
তোমরা ডাইনোসরের নাম শুনেছ, যা লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে ছিল। তোমরা কি জান, কেন এই ডাইনোসর আজ আর পৃথিবীতে নেই?

ডাইনোসরের বিলুপ্তির কারণ
কোনো কোনো বিজ্ঞানীর ধারণা, ডাইনোসর যখন পৃথিবীতে ছিল তখন পৃথিবী অনেক গরম ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পৃথিবী অনেক ঠান্ডা হয়ে যায়। ঠান্ডা সইতে না পেরে তারা সবাই মারা যায়।
আবার কারো কারো মতে, যখন পৃথিবীতে অন্য প্রাণীদের আবির্ভাব ঘটে, তখন তারা খাদ্য হিসেবে ডাইনোসরের ডিম খাওয়া শুরু করে। ডাইনোসর তাদের ডিম সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়। ফলে ধীরে ধীরে তাদের বিলুপ্তি ঘটে।
আবার অনেক বিজ্ঞানী বলেন, পৃথিবীর পরিবেশে তখন এমন সব পরিবর্তন ঘটে, যার সাথে ডাইনোসররা নিজেদেরকে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, প্রাকৃতিকভাবে পরিবেশের পরিবর্তন বা মানুষের কোনো কর্মকাণ্ডের কারণে যদি পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে, তখন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে জীব পরিবেশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণ কী কী? নিচের কাজটি সম্পন্ন করার মাধ্যমে এর উত্তর খুঁজে বের কর।

কাজ: তোমার এলাকার বা স্কুলের আশেপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ কর (এই পরিবেশ হতে পারে কোনো সমতল ভূমি, কোনো পুকুর বা জলাশয় বা কোনো বনাঞ্চল)। দেখ এখানে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে কী? পরিবর্তন ঘটার কারণ কী কী? তোমার নোট খাতায় লিখ। এতে মানুষসহ উদ্ভিদ বা কোনো প্রাণীর কি কোনো ক্ষতি হয়েছে? হয়ে থাকলে সেগুলো নোট খাতায় উল্লেখ করে রাখ। শ্রেণিতে পরিবেশের পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা কর।

বর্তমানে পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়তি মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য বনজঙ্গল কেটে বাড়িঘর, চাষের জমি, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট ইত্যাদি তৈরি করা হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। এ ছাড়াও মানুষ বিভিন্নভাবে মাটি, পানি ও বায়ু দুষিত করছে। ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল। এভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশকে নষ্ট না করে একে সংরক্ষণে সচেষ্ট হতে হবে।

Content added By

পরিবেশের উপাদানের আন্তঃসম্পর্ক এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতা (পাঠ ৭-৮)

831

পরিবেশের সকল অজীব বা জড় উপাদানের সাথে জীব উপাদানসমূহের সবসময়ই পারস্পরিক ক্রিয়া, আদান-প্রদান চলছে। এমনকি জীব পরিবেশে যে উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে, তাদের মধ্যেও চলছে এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া। বেঁচে থাকার জন্য এরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। কোন অঞ্চলের জীব উপাদান ও জড় উপাদানের নির্ভরশীলতার সম্পর্কে নাম বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম।

পৃথিবীতে যত প্রকার জীব আছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো তিমি- এটা তোমরা জান। আর ক্ষুদ্রতম হলো ব্যাকটেরিয়া। বড় থেকে ক্ষুদ্র সকল জীবই কিন্তু পরস্পর পরস্পরের সাথে বিভিন্নভাবে সম্পর্কিত।
পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে সম্পর্ক আছে। এদের সাথে আবার বায়ু, মাটি ও পানির যে সম্পর্ক তা একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলছে। এর মধ্যে কোনো প্রক্রিয়া অতি সাধারণ, আবার কোনোটি অতি জটিল।

কাজ: তোমার নিকট পরিবেশের বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী পর্যবেক্ষণ কর। পর্যবেক্ষণের সময় খেয়াল কর বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী পরিবেশে কীভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। আরও খেয়াল কর উদ্ভিদ ও প্রাণী কীভাবে পরিবেশের অজীব উপাদানের উপর নির্ভরশীল এবং তোমার নোট খাতায় লিখে রাখ। অজীব ও জীব উপাদানের নির্ভরশীলতার প্রবাহচিত্র পোস্টার কাগজে এঁকে শ্রেণিতে প্রদর্শন কর।

জীব জড়ের উপর নির্ভরশীল, আবার একটি জীব অপর একটি জীবের উপর নির্ভরশীল। পরিবেশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তোমরা এ বিষয়টি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যেমন উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির জন্য সৌরশক্তিকে কাজে লাগায়, যা সালোকসংশ্লেষণ নামে পরিচিত। সালোকসংশ্লেষণ (উদ্ভিদ) এবং শ্বসন (উদ্ভিদ এবং প্রাণী) পদ্ধতি পরিবেশের বিভিন্ন অজীব ও জীবের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রধান দুটি উপায়।
উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং পানি ব্যবহার করে গ্লুকোজ এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন অক্সিজেন উদ্ভিদ এবং প্রাণীর শ্বসন প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদনে কাজে লাগে। প্রাণীর শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইড উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। এভাবেই সালোকসংশ্লেষণ এবং শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
জীবমণ্ডলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তোমরা জেনেছ, জীব পরিবেশের প্রধান উপাদান হলো উদ্ভিদ ও প্রাণী। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এরা একে অপরের থেকে ভিন্ন। কিন্তু জীবন ধারণের জন্য এরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল।

কোনো কোনো উদ্ভিদের বংশবিস্তার ঘটে কীটপতঙ্গের মাধ্যমে। জীবন ধারণের জন্য মৌমাছি যখন ফুলে ফুলে বিচরণ করে, তখনই পরাগায়ন ঘটে। আবার বিভিন্ন প্রাণী যেমন পশু পাখি ইত্যাদির মাধ্যমেও উদ্ভিদের বংশবিস্তার হয়। আবার অনেক উদ্ভিদ আছে যারা বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর আশ্রয়স্থল। তোমরাও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের নির্ভরশীলতার অনেক উদাহরণ দিতে পারবে। এরকম আরও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার উদাহরণ তৈরি কর।

Content added By

পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান সংরক্ষণের কৌশল (পাঠ ৯-১০)

604

পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন: মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ, প্রাণী ইত্যাদি সম্পর্কে তোমরা জেনেছ। আরও জেনেছ উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এরা আবার জড় পরিবেশের উপরও নির্ভরশীল। সকল জীব বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভরশীল। পরিবেশের উপাদানসমূহের মধ্যে যদি কোনো কারণে কোনো পরিবর্তন ঘটে, তবে জীবের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হবে। বলতে পার কীভাবে পরিবেশের দূষণ ঘটে?

কাজ: শিক্ষকের নির্দেশনায় দলে একটি দূষিত পরিবেশ (যেমন: হাজামজা পুকুর বা জলাশয়, দূষিত নদী, আবর্জনাময় স্থান ইত্যাদি) পরিদর্শন কর। পরিবেশ দূষিত হওয়ার কারণ শনাক্ত কর। দূষণরোধে করণীয় কী তা ব্যাখ্যা কর। পরিবেশের উপাদানসমূহ সংরক্ষণে করণীয় কী দলে আলোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি কর। শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।

এই অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম

  • প্রাকৃতিক পরিবেশ হলো এমন একটি পরিবেশ, যার মধ্যে রয়েছে জড় বস্তু ও জীব, যা মানুষ সৃষ্টি করতে পারে না।
  • পরিবেশ দুই ধরনের উপাদান নিয়ে গঠিত। জড় উপাদান ও জীব উপাদান। প্রাণহীন সব উপাদান হলো জড় উপাদান এবং সজীব সকল উপাদান হলো জীব উপাদান।
  • বাড়তি মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য বিভিন্নভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যবহার ও ধ্বংস করা হচ্ছে, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণ।
  • পরিবেশের সকল জড় উপাদান ও জীব উপাদানের মধ্যে সর্বদা পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, আদান-প্রদান চলছে। একই ভাবে সকল জীবের মধ্যেও চলছে এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া। বেঁচে থাকার জন্য সকল জীব একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
  • সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান দূষণমুক্ত রাখতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে ।


Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...